হলুদ বৃষ্টি
হলুদ বৃষ্টি হল ১৯৮১ সালে গঠিত একটি রাজনৈতিক ঘটনার বিষয়, যেখানে মার্কিন রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার হেগ সোভিয়েত ইউনিয়ন কে অভিযুক্ত করে টি-২ মাইকোটক্সিন ভিয়েতনাম ও লাওসের মধ্যে কমিউনিস্ট রাজ্যগুলোতে বিদ্রোহ দমনের যুদ্ধে সরবরাহ করার জন্য। শরণার্থীরা একটি চটচটে হলুদ তরল প্লেন বা হেলিকপ্টার থেকে পরাড় বর্ণনা দিয়েছিল, যাকে পরবর্তীতে "হলুদ বৃষতিতেবলা হয়। দশ হাজারেরও বেশি মানুষ এই রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহাররের ফলে নিহত হয়েছে বলে মার্কিন সরকার দাবি করে। সোভিয়েত ইউনিয়ন এই দাবি অস্বীকার করে এবং শুরুর দিকে জাতিসংঘ র তদন্ত ও মীমাংসাহীন ছিল। একদল স্বাধীন বিজ্ঞানী দ্বারা অনুমিত রাসায়নিক এজেন্টর কিছু নমুনা সরবরাহ করা হয়, যেখানে বলা হয় "হলুদ বৃষ্টি" হল মউমাছি নিষ্কাশিত মৌমাছির বৃহৎ ঝাঁকে থেকে জারিত পরাগরেণু ভরা বিষ্ঠা। অন্যান্য বিজ্ঞানীরা শরণার্থীদের অ্যাকাউন্টের নির্ভুলতা কে প্রশ্নবিদ্ধ করে এবং মার্কিন সরকার দ্বারা উপস্থাপিত রাসায়নিক বিশ্লেষণ কে নির্ভরযোগ্য বলে বিবেচনা করে। এই বিষয়ে বৈজ্ঞানিক সাহিত্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ অনুমান বলে যে হলুদ বৃষ্টি একটি সোভিয়েত রাসায়নিক অস্ত্র হিসেবে প্রমাণিত নয়। তবে বিষয়টি বিতর্কিত রয়ে যায় এবং মার্কিন সরকার এই অভিযোগ প্রত্যাহার করেননি, এই বলে যে বিষয়টি পুরোপুরি সমাধান করা হয়েছে। এই ঘটনা সম্পর্কে অনেক মার্কিন দলিল শ্রেণীবদ্ধ রয়েছে।
অভিযোগ
[সম্পাদনা]১৯৭৫ সালে লাওস ও উত্তর ভিয়েতনামের ঘটনায় অভিযোগটি উঠে, যখন দুই সরকার, সোভিয়েত ইউনিয়ন দ্বারা সমর্থিত ছিল এবং যুদ্ধ শুরু করে হ্মোঙ উপজাতির লোকদের উপর, যারা ভিয়েতনাম যুদ্ধএর সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ ভিয়েতনাম এর পক্ষাবলম্বন করেছিল। শরণার্থীরা মনে করে রাসায়নিক যুদ্ধবিগ্রহ হয়েছিল ছোট উড়ন্ত বিমান বা হেলিকপ্টার হামলায়, বিভিন্ন রিপোর্ট এ একটি হলুদ, তৈলাক্ত তরলের কথা বলা হয় যাকে বলে "হলুদ বৃষ্টি"। সেই দাবি উন্মুক্ত করে খিঁচুনি, অন্ধত্ব, এবং রক্তপাত সহ শারীরিক উপসর্গ এবং স্নায়বিক। ১৯৭৮ সালে ও ঠিক একি রকম রিপোর্ট পাওয়া যায় কম্বোডিয়ার ভিয়েতনামী আক্রমণ থেকে ও। ১৯৯৭ সালে ইউ এস আর্মি মেডিকেল বিভাগের দ্বারা প্রকাশিত বই থেকে জানা যায় যে, লাওস, কম্বোডিয়া ও আফগানিস্তানে রাসায়নিক অস্ত্র হামলায় দশ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। হামলার বর্ণনা ছিল বৈচিত্র্যময় এবং সেখানে ছিল শীতাতপনিয়ন্ত্রণ করা ক্যানিস্টার এবং স্প্রে, উদো যাত্রীর সঙ্গের নিজলটবহর, আর্টিলারি শেল, রকেট ও গ্রেনেড যা তরল, ধুলো, গুঁড়ো, ধোঁয়া বা "পোকার-মত" হলুদ, লাল, সবুজ, সাদা বা বাদামি রঙের ফোঁটা উৎপন্ন করে। ১৯৮১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার হেগ ঘোষণা করে যে: সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তার মিত্ররা লাওস, কাম্পুচিয়া এবং আফগানিস্তানে প্রাণঘাতী রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করার খবরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন কিছু সময়ের জন্য শংকিত। বর্আতমানে আমরা একটি শারীরিক প্রমাণ পেয়েছি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে, যা বিশ্লেষণ করে দেখেছে যে, অস্বাভাবিক উচ্চ মাত্রাসম্পন্ন তিন ক্ষমতাশালী মাইকোটক্সিনস-বিষাক্ত পদার্থ যা অঞ্চলের জন্য ক্ষতিকর নয় কিন্তু মানুষ এবং পশুদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। সোভিয়েত ইউনিয়ন এই অভিযোগগুলো কে একটি "বড় মিথ্যা" হিসাবে বর্ণনা করে এবং পালাক্রমে ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের জন্য মার্কিন সরকার কে অভিযুক্ত করে। জাতিসংঘ আমেরিকান অভিযোগ টি পাকিস্তান ও থাইল্যান্ডে তদন্ত করার অনুরোধ জানায়। এটি গঠিত হয় ৫ জন ডাক্তার এবং বিজ্ঞানীর সমন্বয়ে, যারা সাক্ষী সহ সাক্ষাৎকার দেয় এবং নমুনা সংগ্রহ করে আফগানিস্তান ও কম্বোডিয়া থেকে আসা পারপরটেড দের থেকে। যাইহোক, সাক্ষাতকার টি হয় পরস্পরবিরোধী এবং নমুনার বিশ্লেষণ মীমাংসাহীন ছিল। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা দুই উদ্বাস্তুদের পরীক্ষা করে, যারা নিজেদের রাসায়নিক হামলার পর প্রতিক্রিয়া ভুগছেন বলে দাবী করেন, কিন্তু এর পরিবর্তে তাদের ছত্রাকজনিত ত্বকের সংক্রমণ ধরা পড়ে। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয় যে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে কিনা তা তারা যাচাই করতে পারেনি কিন্তু অবস্থাগত প্রমাণে লক্ষনীয় "কিছু স্থানে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ র ব্যবহার কিছু সম্ভাব্য বাছাই এ ইঙ্গিতপূর্ণ"। ১৯৮৩ এবং ১৯৮৪ সালে মার্কিন মাইকোটক্সিন বিশ্লেষকেরা বৈজ্ঞানিক সাহিত্যে রিপোর্ট করে এবং বলে অল্প পরিমাণে মাইকোটক্সিনস মানে বিলিয়ন প্রতি পরিসীমা অংশে ট্রেস মিলিয়ন ট্রাইখোথেন্স । প্রতি বিলিয়ন পরিসীমা অংশে সর্বনিম্ন মাইকোটক্সিন র সীমা সনাক্তকরণ সম্ভব। যাইহোক, এই রিপোর্টে বেশ কিছু অসঙ্গতি থাকার কারণে সৃষ্টি হয় একটি "দীর্ঘায়িত এবং ঝাঁজালো সময়ে, বিশ্লেষণ বৈধতা নিয়ে বিতর্ক"। ২০০৩-চিকিৎসা পর্যালোচনা খেয়াল করে যে এই বিতর্ক খারাপ কিছু ঘটাতে পারে যেহেতু "যদিও বিশ্লেষণাত্মক পদ্ধতি শুরুতে বিতর্কিত ছিল, তারা এখনো যথেষ্ট সংবেদনশীল পরিবেশে ট্রাইখোথেন্স দূষণ কম মাত্রা অর্জন করতে সমর্থ হয়েছে"।
প্রাথমিক তদন্ত
[সম্পাদনা]মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সি জে মিরচা একটি বায়োকেমিক্যাল তদন্ত পরিচালনা করেন।
বিকল্প ব্যাখ্যা
[সম্পাদনা]মৌমাছি হাইপোথিসিস
[সম্পাদনা]১৯৮৩ সালে, হার্ভার্ড জীববিজ্ঞানী এবং জৈব অস্ত্র প্রতিপক্ষের ম্যাথিউ মেসেলসন এবং তার দল দ্বারা এই অভিযোগ করা হয়েছে, যারা লাওস ভ্রমণ করে এবং একটি পৃথক তদন্ত করে। মেসেলসনের দল লক্ষ করে যে, ট্রাইখোথেন্স মাইকোটক্সিনস স্বাভাবিকভাবেই একটি অঞ্চলে ঘটবে। তিনি একটি বিকল্প প্রস্তাব করেন যে, হলুদ বৃষ্টি হল মৌমাছির নিরীহ গাদ। মৌমাছি হাইপোথিসিস প্রকাশ্য হওয়ার পর ১৯৭৬ সালে সেপ্টেম্বর এ চিনের জিয়াংসু প্রদেশে এর উপর একটি সাহিত্য অনুসন্ধান প্রকাশিত হয়। যাইহোক, চীনা বিজ্ঞানীরা ও এই সিদ্ধান্তে আসেন যে ফোঁটা মৌমাছি থেকে এসেছিল।
আরো দেখুন
[সম্পাদনা]- Agent Orange
- Red rain in Kerala
- Sverdlovsk anthrax leak
- Aral smallpox incident
- Allegations of biological warfare in the Korean War
আরও পড়া
[সম্পাদনা]- Evans, Grant (১৯৮৩)। The yellow rainmakers: are chemical weapons being used in Southeast Asia?। London: Verso। আইএসবিএন 0-86091-068-7।
- Martin, Susan Boyles; Anne Clunan; Lavoy, Peter R. (২০০৮)। Terrorism, war, or disease?: unraveling the use of biological weapons। Stanford, Calif: Stanford University Press। আইএসবিএন 0-8047-5977-4।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- The Yellow Rain Affair ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ মার্চ ২০১৬ তারিখে Matthew Meselson and Julian Robinson
- A Note from History: Yellow Rain[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] Defense Treaty Ready Inspection Readiness Program
- Soviet Union–United States relations
- Soviet Union–Vietnam relations
- History of Laos
- History of Vietnam
- Reagan administration controversies
- Propaganda in the United States
- Chemical weapons attacks
- Disinformation operations
- Medical controversies
- Soviet chemical weapons program
- লাওসের ইতিহাস
- চিকিৎসাবৈজ্ঞানিক বিতর্ক