বিষয়বস্তুতে চলুন

উস্টার, ম্যাসাচুসেটস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

উস্টার যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত একটি শহর এবং ম্যাসাচুসেটসের উস্টারের কাউন্টি আসন। ইংল্যান্ডের উস্টারশায়ারের উস্টার শহরের নামানুসারে এর নাম হয় উস্টার। এর জনসংখ্যা ১,৮১,০৪৫।[] এটি নিউ ইংল্যান্ড অঞ্চলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনবহুল শহর। উস্টার বস্টনের ৪০ মাইল পশ্চিমে, স্প্রিংফিল্ডের ৫০ মাইল পূর্বে ও প্রভিডেন্সের ৪০ মাইল উত্তরে অবস্থিত। ম্যাসাচুসেটসের কেন্দ্রে অবস্থিত হওয়ায় এর অপর নাম "কমনওয়েলথের হৃৎপিণ্ড।" তাই হৃৎপিণ্ড শহরটির প্রতীক। কেউ কেউ ধারণা করেন শহরের বাসিন্দা এস্থার হাউল্যান্ড ভালোবাসা দিবস কার্ড জনপ্রিয় করতে ভূমিকা রাখায়-ও ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে হৃৎপিণ্ডের ব্যবহার করা হতে পারে।[]

ডানটাউন উর্চেস্টার, ম্যাসাচুসেটস।

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

নিপমুক জাতির লোকেরা উস্টারের আদি বাসিন্দা। আদিবাসীরা এর নাম দেয় কুইনসিগামন্ড। পাকাচোয়াঙ পাহাড়ে তাদের বসবাস ছিল। ১৬৭৩ সালে ইংরেজ অভিযাত্রী জন ইলিয়ট ও ড্যানিয়েল গুকিন একটি খ্রিস্টান শহর প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এখানে পৌঁছান। ১৬৭৪ সালের ১৩ জুলাই গুকিন আদিবাসীদের কাছ থেকে আট বর্গমাইল ভূমির স্বত্ব গ্রহণ করেন। ইংরেজ ব্যবসায়ীরা দ্রুতই এখানে বসতি স্থাপন করে। []

১৬৭৫ সালে আদিবাসী রাজা ফিলিপ যুদ্ধ ঘোষণা করলে শহরের আদিবাসীরা তাকে সহযোগিতা করেন। তখন ইংরেজ বাসিন্দারা শহর ছেড়ে পালিয়ে যান। রানি অ্যানের যুদ্ধ শুরু হলে ১৭০২ সালে ইংরেজরা শহর ছেড়ে পুনরায় পালিয়ে যান। অবশেষে জোনাস রাইস ১৭১৩ সালে এখানে তৃতীয় ও চূড়ান্তবারের মতো বসতি স্থাপন করে । এর নাম হয় উস্টার ও ১৭২২ সালের ১৪ জুন একে স্থানীয় প্রশাসনের আওতাভুক্ত করা হয়। ১৭৩১ সালের ২ এপ্রিল এটি নবগঠিত উস্টার কাউন্টির সদর দপ্তর হিসেবে মর্যাদা লাভ করে। ১৭৫৫ থেকে ১৭৫৮ সালে এখানে রাষ্ট্রপতি জন অ্যাডামস আইন অধ্যয়নের পাশাপাশি স্কুলশিক্ষকের চাকরি করেন।

১৭৭০ এর দশকে এটি স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র হয়ে ওঠে। ১৭৭৫ সালে স্বাধীনতাকামী ও ম্যাসাচুসেটস স্পাই পত্রিকার সম্পাদক ইসাইয়া থমাস ব্রিটিশ অধিকৃত বোস্টন থেকে কার্যালয় উস্টারে সরিয়ে আনেন। ঐ বছর ব্রিটিশ গোয়েন্দা গ্যাগ থমাস এখানে স্বাধীনতাপন্থীরা সমরাস্ত্র মজুদ করেছে- এমন তথ্য পান। ১৭৭৬ সালের ১৪ই জুলাই টমাস জেফারসন শহরের ওল্ড সাউথ চার্চ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।[] ১৮১২ সালে জেফারসন এখানে আমেরিকান প্রত্নতাত্ত্বিক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। []

অষ্টাদশ শতাব্দীতে এখানে উৎপাদনশিল্পের প্রসার ঘটে। নিকটস্থ ব্ল্যাকস্টোন নদীর তীরে পোশাক ও জুতা তৈরির কারখানা গড়ে ওঠে। ১৮২৮ সালে ব্ল্যাকস্টোন খাল ও ১৮৩৫ সালে উস্টার ও বোস্টন রেলসড়ক নির্মাণের মাধ্যমে এর অর্থনীতি দ্রুত উন্নতি লাভ করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহনব্যবসার অন্যতম চালিকাশক্তি হয়ে ওঠে। [] খুব দ্রুতই আইরিশ, স্কটিশ, পোলিশ ও লিথুয়ানীয় অভিবাসীরা উস্টারে বসতি স্থাপন করে। [] তারা রাস্তার ধারে গড়ে ওঠা ত্রিতল আবাসিক ভবনে বসবাস করত।

১৮৩১ সালে আইখাবোড ওয়াসবার্ন ওয়াসবার্ন ও মোয়েন কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এটি দেশের বৃহত্তম বৈদ্যুতিক তার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। []

তাঁতশিল্প,তার ও যন্ত্রাংশ তৈরির খাত উস্টারে ক্রমশ প্রসার লাভ করে। ১৯০৮ সালের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, রয়েল উস্টার করসেট কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রে নারীদের সবচেয়ে বড় কর্মসংস্থানদাতা ছিল।

১৮৪৭ সালে উস্টারনিবাসী এস্থার হাউল্যান্ড সর্বপ্রথম ভালোবাসা দিবসের কার্ড বের করেন। লোরিং কোয়েস মানকি রেঞ্চ ( এক ধরনের করাত) ও রাসেল হাউয়েস খাম ভাঁজ করার যন্ত্র আবিষ্কার করেন।

১৯৫৩ সালের ৯ জুন উস্টারের উত্তর-পশ্চিমে পিটারশেম শহরে টর্নেডো আঘাত করে। উস্টার শহরে এটি ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এতে ৯৪ জন নিহত হন।

১৯৫০-১৯৮০ এর ভেতরে শহরের জনসংখ্যা ২০% হ্রাস পায়। শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোও হুমকির মুখে পড়তে থাকে।

১৯৬৩ সালে উস্টারের বাসিন্দা হার্ভে বল স্মাইলি আবিষ্কার করেন। []

বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে উস্টারের অর্থনীতির জৈবপ্রযুক্তি ও স্বাস্থ্যখাতে বৈপ্লবিক অগ্রগতি সাধিত হয়।[১০]

১৯৯৯ সালের ৩ ডিসেম্বর একজন গৃহহীন লোক ও তার বান্ধবী উস্টার হিমাগারে আগুন ধরিয়ে দেয়। অগ্নিকাণ্ডে ছয়জন অগ্নিনির্বাপক যোদ্ধা মারা যান। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিল ক্লিনটন,উপরাষ্ট্রপতি আল গোর সহ অনেকেই উস্টার শহরে তাদের উদ্দেশ্যে আয়োজিত শোকসভায় যোগদান করেন।

সম্প্রতি শহরটির হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারে হ্যানোভার বিমা কোম্পানি, ম্যাসাচুসেটস ফার্মেসি ও স্বাস্থ্যবিজ্ঞান কলেজ ও গভর্নর চার্লি বেকারের প্রশাসন বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

ভূগোল

[সম্পাদনা]

উস্টারের আয়তন ৩৮.৬ বর্গমাইল, যার ৩৭.৬ বর্গমাইল স্থল ও ১ বর্গমাইল জল। অবার্ন,গ্রাফটন, হোল্ডেন,লেইচেস্টারসহ বিভিন্ন শহর উস্টারকে চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে।

শহরের মধ্য দিয়ে ব্ল্যকস্টোন নদী প্রবাহিত হয়।

উস্টার শহরে অনেকগুলো পাহাড় রয়েছে:এয়ারক্রফট, ব্যাংক্রফট, বেলমন্ট, গ্রাফটন, গ্রিন, ভার্নন প্রভৃতি।

শহরে ইন্ডিয়ান ও কুইসগামন্ড হ্রদ অবস্থিত। শেষোক্ত হ্রদে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।

জলবায়ু

[সম্পাদনা]

এর জলবায়ু নিউ ইংল্যান্ড অঞ্চলের অন্যান্য জায়গার মতই আর্দ্র ধরনের। এর উষ্ণতম মাস জুলাই,এসময় গড় তাপমাত্রা হয় ৭০.২ ডিগ্রি ফারেনহাইট।

শহরে প্রতিবছর ১,১২০ মি.মি. বৃষ্টিপাত ও ১০০-১৩০ ইঞ্চি তুষারপাত হয়।

জনমিতি

[সম্পাদনা]

২০১০ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী উস্টার শহরে ১,৮১,০৪৫ জন বাসিন্দা ছিলেন; যাদের ৮৮,১৫০ জন পুরুষ ও ৯২,৮৯৫ জন মহিলা। ৭৭.৯% বাসিন্দাদের বয়স ১৮ বছরের বেশি ও ১১.৭% বাসিন্দাদের বয়স ৬৫ বছরের বেশি। তাদের গড় আয়ু ৩৩.৪ বছর।

উস্টারের অধিবাসীদের মধ্যে ৬৯.৪% শ্বেতাঙ্গ, ১১.৬% আফ্রিকান-আমেরিকান, ৬.১% এশিয়ান ও ০.৪% আমেরিকান আদিবাসী। হিস্পানিক ও লাতিনোরা মোট জনসংখ্যার ২০.৯%।[১১]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]